Blog Grid Light
- Home
- Blog Grid Light
ব্যক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব
ব্যক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব অনেক বেশী। যারা দুনিয়া এবং আখেরাত – দুই জগতে সফলতা চায় তারা অনেকে মনে করেন দুনিয়ার কাজ মানে সময় নষ্ট। আসলে এই পৃথিবীর কাজগুলো সঠিকভাবে, সৎভাবে করার মাধ্যমে আপনাকে পরকালের সফলতা অর্জন করতে হবে
আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ার হন আর আপনি দক্ষতা অর্জন না করে কনস্ট্রাকশন বা ডিজাইন করেন তাহলে আপনি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে প্রতারণা করছেন, আপনার অজান্তেই। তাই, যা করবেন তাতে নিজের দক্ষতা বাড়ান। নিজেকে ডেভেলাপ করার জন্য সময়, শ্রম এবং অর্থ খরচ করুন। তাতে আপনার আয় বাড়বে, সুনাম বাড়বে, আপনার লক্ষ্যে পৌঁছা সহজ হবে।
আপনার প্রফেশনে আপনি বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিজেকে তৈরী করুন
আমি অনেক প্রজেক্টে কাজ করেছি যেখানে ইঞ্জিনিয়ারদের ভুল ডিজাইন অথবা কনস্ট্রাকশনের ভুলের কারনে প্রজেক্টের মালিকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি সে সব প্রজেক্টের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বের হয়েছে এই তথ্য। সুতরাং, আপনার প্রফেশনকে সম্মান করুন, দায়ীত্বশীল হোন, কোন বিষয় জানা না থাকলে জেনে নিন, কোন বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলে অভিজ্ঞদের সহায়তা নিন।
অনেকে অভিযোগ করেন, সময় নেই। সময়ের অভাবে আত্মোন্নয়নে কাজ করা যাচ্ছে না। করাতের গল্প সবাই জানেন। এক লোক দশ বছরের পুরনো জংধরা করাত দিয়ে কাঠ কাটছে। আর অন্যজন নতুন ধারালো করাত দিয়ে। আপনি বলেন কার এফিসিয়েন্সি বেশী হবে? কয়গুন বেশী হবে? এখন ধরেন আপনি ভোঁতা করাতের লোককে যদি বলেন, ভাই, আপনার করাত ধার দেন অথবা নতুন করাত কিনেন। সে যদি বলে, সময় নেই, এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কাঠ কাটা। তাহলে আপনি কি বুঝবেন। এই লোক এক বোকা লোক। অনুরূপভাবে, আপনি যদি প্রফেশনাল কাজ করতে গিয়ে নিজের উন্নয়নের জন্য সময় না পান, তাহলে আপনি সেই জংধরা করাতের অধিকারি ব্যস্ত লোক। আরেকজনের উদাহরণ দিই। এক লোকের একটা গাভী আছে যেটা দিনে ১০ লিটার দুধ দেয়। কিন্তু, ৫ লিটার দুধের টাকা তার গাভীর খাবার কিনতে ব্যয় হয়। ২ লিটার দুধের টাকা তার অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়। বাকী ৩ লিটার দুধ তার লাভ যা দিয়ে তার সংসার চলে। এখন সে চিন্তা করল, লাভ আরেক্টু বাড়ানোর জন্য গাভীর খাবার অর্ধেক করে দিল। কিছুদিন ভালই হলো, লাভ আর লাভ। মাস খানেক পরে গাভীর দুধ দেয়া কমতে থাকল। একসময় গাভীটি অসুস্থ হয়ে দুধ দেয়া বন্ধ করে দিল। বাছুরটির জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা। মেশিনের রক্ষনাবেক্ষণ ছাড়া শুধু প্রোডাকশনের চিন্তা করার মত বিষয়। করাতে ধার না দিয়ে গাছ কাটার কাহিনী। সুতরাং আপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যে সময় ব্যয় করবেন সেটা হল করাতের ধার দেয়ার সমতুল্য, গাভীকে সঠিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো বা মেশিনের যত্ন নেয়ার সমতুল্য।
আপনার প্রতিদিনের রুটিনে নিয়মিত আত্মউন্নয়নের ব্যাপারটি থাকা উচিত। এটা সময় সফলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আপনি আপনার সময়কে কাজে লাগান কিন্তু নিজেকে যদি উন্নত না করেন তবে এই সময় দিয়ে কী হবে। আপনি আপনার আয় বৃদ্ধি বা পেশাগত অগ্রগতি যাই চান না কেন আপনাকে অবশ্যই নিজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে, ক্রমবিকাশের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। তবেই আপনার পদোন্নতি বা আর্থিক উন্নতি ঘটবে।
নিজের উন্নতি ও অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত সময় বরাদ্ধ রাখতে হবে যা শুধুই নতুন কিছু শিখার জন্য, নতুন কোন স্কিল ডেভেলাপ করার জন্য, বা পুরনো স্কিলকে আরো উন্নত করার জন্য ব্যয় করবেন। আপনার অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা যা আছে তা নিয়ে আর বেশী দূর এগুতে পারবেন না। ইতিমধ্যে অনেকে প্রতিযোগিতায় চলে আসবে। আপনি যদি আপনার পেশাগত জীবনে আরও সমৃদ্ধি চান, মাথা তুলে দাঁড়াতে চান তবে আপনাকে আরও জ্ঞান অর্জন করতে হবে, স্কিল বাড়াতে হবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে। আপনি যদি আয় বৃদ্ধি করতে চান, আর্থিক উন্নতি চান তবে আপনাকে অবশ্যই আরও শিখতে হবে।
যেখানে উন্নতির জন্য চেষ্টা নাই সেখানে অবনতি ঘটবেই। তাই অবিরত উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি দিনে এক ঘণ্টা বই পড়েন যা আপনাকে সমৃদ্ধ করে তবে আপনি পাঁচ বছরের মধ্যে সমাজের অভিজাত এক শতাংশে পৌঁছে যেতে পারেন। এটা সফল ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতালব্ধ কথা এবং পরীক্ষিত সত্য। তবে অধ্যয়ন বা পাঠ অবশ্যই আপনার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য কেন্দ্রিক হতে হবে। পেশাগতভাবে আপনি যে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে উৎকৃষ্টতা অর্জন করতে চান তাতে সময় দিতে হবে।
আত্ম উন্নয়নের আরেকটি ভালো কৌশল হচ্ছে গাড়িতে বা যাত্রাপথে যেকোন অনুপ্রেরণামূলক বা শিক্ষণীয় ভিডিও বা অডিও দেখা বা শোনা । এমন কোন তথ্য, বুদ্ধি বা ধারণা যা আপনার কাজে লাগতে পারে তা লিখে রাখুন, টুকে নিন বা কর্মজীবনে কাজে লাগান। নিজের মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করে খুব সহজেই নিজেকে উন্নত করতে পারেন। ঢাকা শহরে একজন লোক বছরে ৪০০ থেকে ৮০০ ঘণ্টা গাড়িতে কাটায়। এই সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২-৪ সেমিস্টারের কোর্সের সমান। আপনি যদি গাড়িতে কাটানো সময় ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন তবে তা দিয়ে আপনাকের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত কি কাজে ব্যয় করলাম তার হিসাব দিতে হবে পরকালে। আপনার সময়টাকে সোস্যাল মিডিয়ায় বিনোদনে নষ্ট করতে পারেন, আবার নতুন কিছু শিখার মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে নিজের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। এখানে আপনি সম্পুর্ণ স্বাধীন। এক্ষেত্রে তাকদ্বীরের দোষ দেওয়া যায় না।
বছরে ৪-৮ টা সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা অনুষ্ঠানে যোগ দিন যেখানে আপনার পেশা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ লোকজন কথা বলবে। অনলাইনে অনেক কোর্স আছে যা আপনার পেশাদারিত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। এ ধরনের অনলাইন কোর্স, সেমিনার বা অফলাইন ওয়ার্কশপ, সেমিনার খুঁজে বের করুন। একাজে ব্যয়িত প্রতিটা অর্থ এবং শ্রম আপনি শতগুনে রিটার্ন পাবেন। কারণ হচ্ছে আপনি যে ক্ষেত্রে বা পেশায় আছেন সেই ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ। এটা একটি অমূল্য শিক্ষার সুযোগ। এটা আপনাকে কী করতে হবে তা যেমন জানাবে তেমনি কী করতে হবে না তা সম্পর্কেও সতর্ক করবে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষক যদি সরাসরি ঐ পেশায় জড়িত থাকে যেটার উপর সে লেকচার দিচ্ছে তাহলে তার লেকচার, সেমিনার, অনলাইন কোর্স, অফলাইন কোর্স কখনো মিস করবেন না। ব্যক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে আশা করি বুঝতে পেরেছেন।